'ইল্লাল্লাহু ' জিকির= জায়েজ/ নাজায়েজ, সওয়াব হবে / হবে না ➤মাওলানা ইজহারুল ইসলাম
ইসলামে ইবাদতের কনসেপ্ট খুবই ব্যাপক একটি বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, সঠিক নিয়তের মাধ্যমে শরয়ী সীমা-রেখার মধ্যে একজন মু'মিনের সমস্ত কাজই ইবাদত হতে পারে। এমনকি স্ত্রী সহবাসও একটি ইবাদত।
এজন্য একজন মু'মিন সঠিক নিয়তের মাধ্যমে যাই করবে তাই ইবাদত হতে পারে। ঘুম, খাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবারকে সময় দেয়া সব কিছুই।(এ বিষয়ে আমার লম্বা একটা আলোচনা আছে। লিংক পেলে কমেন্টে শেয়ার করব ইনশা আল্লাহ)।
এবার আসি রিয়াজত ও ইবাদত নিয়ে। ইদানীং ফেইসবুকে একটি বিষয় বেশ চর্চা হচ্ছে যে, ইল্লাল্লাহ এর জিকির ইবাদতের নিয়তে করলে বিদয়াত আর রিয়াজতের নিয়তে করলে বিদয়াত নয়।
এই বক্তব্য বাস্তবতার নিরিখে পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ, মু'মিনের রিয়াজতও তার নিয়েতর উপর নির্ভর করে ইবাদত হতে পারে। এখানে বিদয়াত হওয়া বা না হওয়াটা আসলে ইবাদত নাকি রিয়াজত এর উপরও নির্ভর করে না। বিষয়টা একটু খুলে বলি।
'ইল্লাল্লাহ' এর জিকির মৌলিকভাবে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এরই জিকির। এখানে ইসবাতের উপর অধিক জোর দেয়ার জন্য নফীর অংশটা উচ্চারণ না করে শুধু ইসবাতকে বার বার মুখে উচ্চারণ করা হচ্ছে। যদিও প্রকৃত অর্থে এটি সম্পূর্ণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এরই জিকির। এজন্য সওয়াবের দিক থেকে একজন সালেক পুরো 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর জিকিরই এর সওয়াব আশা করে। আংশিক শব্দের সওয়াব এখানে কেউ আশা করে না। আর আল্লাহর সাথে বান্দার মু'য়ামালা তার অন্তরের নিয়ত ও ইখলাসের সাথে। সুতরাং এখানে একজন সালেক ( আল্লাহর পথের পথিক) পূর্ণ কালেমার জিকিরের সওয়াবই আশা করে। আর এতে শরয়ী কোন প্রতিবন্ধকতাও নেই।
এবার আসি বিদয়াতের বিষয়ে। এখানে বিদয়াতের প্রশ্ন কেন আসছে? এর কারণ, ইসবাতের উপর জোর দিয়ে শুধু 'ইল্লাল্লাহ' এর জিকির রাসূল স: বা সাহাবায়ে কেরাম করেননি। এজন্য এটা বিদয়াত।
আমরা বলি, এটা বিদয়াত বিষয়ে আপনার ভুল বুঝ। কোন কিছু রাসূল স: বা সাহাবায়ে কেরামন না করলেই সেটা বিদয়াত হয় না। এজন্য আপনাকে আগে শরীয়তে বিদয়াত কী জিনিস, সেটা ভালোভাবে শিখতে হবে। এখানে আপনার জ্ঞানের ত্রুটি অন্যোর চাপিয়ে দেয়ার কোন অর্থ নেই।
এখন প্রশ্ন হলো, ইল্লাল্লাহ এর জিকির কোন ক্ষেত্রে বিদয়াত হতে পারে?
বিষয়টা খুব সহজ। শরীয়তের যেসব ব্যাপক অনুমোদিত বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোন একটা ধরণ নির্ধারিত হয়নি, মৌলিকভাবে এসব বিষয়কে বৈধ বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত ধরা হয়। এখন কারও পীর সাহেব তাকে দিনে একশ' বার বা দু'শ বার 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর জিকির ওজীফা হিসেবে দিলো। শরীয়তে ব্যাপকভাবে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর জিকিরের কথা আছে। কিন্তু একশ' বা দু'শকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। এবং এই নির্ধারণের জন্য আলাদা করে কোন সওয়াবও বলা হয়নি।
এখন এভাবে নিজের পক্ষ থেকে একশ' বার বা দু'শ বার জিকির নির্ধারণ করে নেয়া কি বিদয়াত?
না। মৌলিকভাবে এটি বিদয়াত নয়। কারণ, শরীয়তের ব্যাপক অনুমোদনে একশ, দু'শ বা পাঁচ দশ লাখ, সবই আছে। এখানে কোন আপার লিমিট বা লোয়ার লিমিট নেই। সুতরাং যে কোন সংখ্যাই শরীয়তের মৌলিক অনুমোদনের অধীনে থাকবে।
এক্ষেত্রে বিদয়াত হওয়ার সম্ভাবনা কোথায়? যখন কেউ তার পীর সাহেবের দেয়া এই জিকিরকে শরীয়তের নির্ধারিত বিষয় মনে করবে। অর্থাৎ দু'শ বার জিকির করা এটা শরয়ী বিধান। প্রতি দিন দু'শ বার জিকিরের এই এই ফজীলত শরীয়তে আছে। এগুলো বিশ্বাস করা হলো বিদয়াত। কারণ, শরীয়তে দু'শ বার নির্দিষ্ট করে বিধান দেয়া হয়নি আবার দু'শবার জিকিরের বিশেষ কোন ফজীলতও বলা হয়নি।
যেখানে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন সংখ্যা নির্ধারিত হয়নি সেখানে এটা বিশ্বাস করা বিদয়াত হবে যে, এটা শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত। শরীয়ত এখানে আমলের সুবিধার জন্য যে কোন সংখ্যা নিজের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু আমাদের নির্ধারণ করা সংখ্যার আলাদা কোন ফজীলত নির্ধারণ করেনি। এজন্য এটা বিশ্বাস করা বিদয়াত হবে যে, প্রতি দিন দু'শ বার জিকির করা শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত। শুধু দু'শ বারের আলাদা এই এই ফজীলত আছে। এজাতীয় বিশ্বাসগুলো বিদয়াত।
একইভাবে শরীয়তের পক্ষ থেকে বিশেষ কোন সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি যে, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর জিকির ঠিক দিনের অমুক সময়ে করতে হবে। শরীয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই এমন যে কোন সময়ে এই জিকির করা যেতে পারে। এখন কারও পীর সাহেব যদি বলে দেই যে, প্রতি দিন ফজরের পর দু'শ বার এই জিকির করবে।
পীর সাহেবের পক্ষ থেকে প্রতি দিন ফজরের পর জিকিরের সময় নির্ধারণ করে দেয়াটা শরীয়তে অনুমোদিত। এটি আ'দী বা স্বাভাবিক নির্ধারণ। যে কোন সময় যেহেতু করা যায়, এজন্য আমাদের কাজের সুবিধার জন্য আমরা চব্বিশ ঘন্টা থেকে একটা সময় বেছে নিতে পারি। এটি সম্পূর্ণ বৈধ বিষয়।
এখন কেউ যদি মনে করে, ফজরের পর জিকির করাটা শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত এবং এর এই এই ফজীলত আছে, তাহলে এটি বিদয়াত হবে। কারণ, শরীয়তের পক্ষ থেকে ফজরের পরের সময়টাকে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর জিকির দু'শ বার করার জন্য বিশেষভাবে বলেনি।
শরীয়তের ব্যাপক অনুমোদনের আলোকে নিজেদের কাজের সুবিধার জন্য কোন একটা সংখ্যা নির্ধারণ করে নেয়া বা কোন একটা সময় নির্ধারণ করাটা মৌলিকভাবে জায়েজ। এটি বিদয়াত নয়। কিন্তু এই নির্ধারণকে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত মনে করাটা বিদয়াত। এখানে কেউ যদি এই নির্ধারণকে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারণ মনে না করে তাহলে তার জন্য এটি বিদয়াত হবে না।
একই কথা ইল্লাল্লাহ এর জিকিরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শরীয়তে স্পষ্টভাবে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর জিকিরকে সর্বোত্তম জিকির বলা হয়েছে। এখন এক ব্যক্তি কালেমার তাওহীদের অংশের উপর জোর দেয়ার জন্য প্রথম অংশ উহ্য রেখে দ্বিতীয় অংশ বার বার বলছে। এটি মৌলিকভাবে জায়েজ।
এখন কেউ যদি মনে করে, শুধু 'ইল্লাল্লাহ' এর জিকিরই শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত এবং শুধু 'ইল্লাল্লাহ' এর বিশেষ ফজীলত ও সওয়াব শরীয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাহলে এটি বিদয়াত হবে। এই বিশ্বাস যদি না থাকে, তাহলে তার জন্য বিদয়াত হবে না।
এখানে বিদয়াত হওয়া বা না হওয়ার মূল হলো, নিজেদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিষয়কে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত মনে করা হচ্ছে কি না, এর উপর। যদি নিজেদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিষয়কে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিষয় মনে করা হয়, তাহলে এটি বিদয়াত হবে। নতুবা হবে না।
তবে মৌলিকভাবে সকল ক্ষেত্রেই এটি ইবাদত ও সওয়াবের মাধ্যম। দু'শ বার জিকির করলে এটি পীর সাহেবের ওজীফা হওয়ার কারণে এর কোন সওয়াব হবে না বা এটি কোন ইবাদত নয়, এই চিন্তা করার কোন অর্থ নেই। বরং মূল জিকিরের জন্য সে সওয়াব পাবে। কিন্তু দু'শ সংখ্যা নির্ধারণের বিশেষ কোন ফজীলত বা সওয়াব পাবে না। একইভাবে মৌলিক জিকিরের সওয়াব সে পেয়ে যাবে কিন্তু বিশেষভাবে ফজরের পর হওয়ার কারণে আলাদা কোন সওয়াব পাবে না। কারণ, এটা শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত নয়।
ইল্লাল্লাহ এর জিকিরের ক্ষেত্রেও এটি ইবাদত ও সওয়াবের মাধ্যম। তবে পৃথকভাবে শুধু 'ইল্লাল্লাহ' শব্দের জিকিরের জন্য আলাদা কোন ফজীলত শরীয়তে নেই। শরীয়তে একথা বলা নেই য়ে, কেউ যদি তাওহীদের উপর জোর দেয়ার জন্য দু'শ শুধ ইল্লাল্লাহ জিকির করে তাহলে সে এই সওয়াব পাবে। এধরণের নির্ধারণ না থাকায় মৌলিক জিকিরের সওয়াব সে পাবে। শুধু 'ইল্লাল্লাহ' শব্দের জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে আলাদা কোন সওয়াবের কথা সে বিশ্বাস রাখবে না।
আলহামদুলিল্লাহ। বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি
উত্তরমুছুন