আজ ছিলো গণতন্ত্র দিবস।

Published from Blogger Prime Android App

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে গণতন্ত্র সূচকে ৭৬তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর পথ পরিক্রমায় কম উন্নতি হয়নি। ৫০ বছরে ৭৬তম। অবশ্য দুই বছরে ৮৮ থেকে ৭৬ এ উন্নীত হওয়ায় যারপরনাই খুশি সংশ্লিষ্ট মহল।

কিন্তু সমস্যা কোথায়?
এদেশের নেতারা ব্যর্থ? নাকি জনগণ ব্যর্থ?
নাকি সমস্যা আমাদের সফলতার মানদণ্ডেই? যার ফলে খোদ গণতন্ত্রই ব্যর্থ? 

একটা দেশে গণতন্ত্র থাকা মানে, সেখানে বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে। সে দেশের মানুষের ওপর ভিন্ন কোন মত চাপিয়ে দেয়া যাবেনা। দেশের মানুষ নিজেদের মতো করে সরকার গঠন ও পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এটাই জানি গণতন্ত্রের সুবিধা।

কিন্তু যদি কোন দেশের মানুষের ওপর খোদ গণতন্ত্রকেই চাপিয়ে দেয়া হয়?

একটা জনপদের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী মুসলমান। সে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী দেশ স্বাধীন হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য। অথচ দেশ পরিচালনার মূলনীতিতে নিয়ে আসা হয়েছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও জাতীয়তাবাদ কে। যার মাঝে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মতামত ও চিন্তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি৷ তাদের চর্চিত জীবনধারার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে দিনশেষে ফলাফল ছিয়াত্তর।

অপরদিকে গণতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে সমাজতন্ত্র কে। যে সমাজতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে শিল্পবিপ্লব পরবর্তী মুনাফাখোর পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তার মানে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ, পূঁজির ব্যবহার ও উৎপাদনসহ অর্থ ও শ্রমশিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরস্পর সাংঘর্ষিক দুটি নীতি হচ্ছে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। অথচ দুটি মতবাদই একসাথে এককাতারে শোভা পাচ্ছে দেশ পরিচালনার নীতিতে। ফলশ্রুতিতে দিনশেষে ফলাফল ছিয়াত্তর। 

গণতন্ত্রের মূলনীতিতে সকল ক্ষমতার উৎস বা মালিক জনগণকেই মনে করা হয়। অর্থলগ্নি, পূঁজি ও উৎপাদনের অবাধ স্বাধীনতার ফলে সুদকে বৈধ মনে করা হয়। ব্যক্তির ইচ্ছার স্বাধীনতার কারণে পরস্পরের সম্মতিতে অসামাজিকভাবেও যিনা-ব্যভিচারকে আইনসিদ্ধ বলা হয়। এসবের সাথে সাংঘর্ষিক নীতিকে অবৈধ বলা হয়। 

গণতন্ত্র বাক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বললেও তার নীতির সাথে সাংঘর্ষিক কুরআনি নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে। শুধু চ্যালেঞ্জই করেনা; বরং অবৈধ মনে করে। অপরদিকে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী (সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত অধিকারের বলেই) গণতন্ত্রের এসব নীতির সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে করছে এবং করবে। ফলশ্রুতিতে দিনশেষে ফলাফল ছিয়াত্তর। 

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, আমাদের দেশের নেতারা না পারছে গণতান্ত্রিক হতে, না পারছে সমাজতান্ত্রিক হতে। পারছেনা ধর্মনিরপেক্ষ বা জাতীয়তাবাদী হতে। পশ্চিমাদের থেকে পিঠ বাঁচাতে এক নীতি আবার প্রতিবেশীকে সন্তুষ্ট রাখতে এক নীতি। এভাবেই চলছে দেশ। সেইসাথে নিজেদের তৈরি নীতিগুলোকে নিজেরাই শ্লীলতাহানি করে চলেছে ৫০ বছর ধরে। তারপরও যে দিনশেষে বৈশ্বিক সূচকে ছিয়াত্তর এসেছে, সেটাই পরম প্রাপ্তি। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

 ৫ মামলায় মামুনুল হককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট

Body Smell: ৩ খাবার: নিয়মিত খেলে দূর হবে ঘামের দুর্গন্ধ

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেমন হওয়া উচিত ছিলো -মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি