সেক্যুলারিজম-প্লুরালিজম ব্যবচ্ছেদ। -জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ


Published from Blogger Prime Android App
প্লুরালিজম আর সেক্যুলারিজমের মধ্যে কোনটা ভাল, এই আলাপ যখন মুসলিম পরিচয়ধারী কেউ করেন, তখন বড় কষ্ট লাগে। কেন আপনার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সমাজ ও রাষ্ট্রের চিন্তা কি চরমপন্থী বা উগ্রপন্থী? আপনার নবীর দেয়া জীবনব্যবস্থায় কি সমাজের সকলকে নিয়ে চলার পথ বাতলে দেয়া হয়নি? শত শত বছর ধরে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে ভিন্নধর্মী, এমনকি নাস্তিকরা পর্যন্ত নাগরিক অধিকার নিয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস করেনি? 

আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা ইসলামকে ইউরোপীয় পাদ্রীতান্ত্রিক ধর্মের সাথে তুলনা করে ধর্মবেজ রাষ্ট্র, রাজনীতির বিপক্ষে কলম ধরি।‌ অতঃপর সমাধান হিসেবে সেক্যুলারিজম বা প্লুরালিজম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি। অথচ বহুত্ববাদী সমাজ, নাগরিক হিসেবে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেও ধর্মীয় রাষ্ট্র যে হতে পারে বরং উত্তম হতে পারে, এর উদাহরণ কিন্তু ইসলাম শত শত বছরের ইতিহাস দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে।

আজকের সেক্যুলার ভারত রাষ্ট্রের চেয়ে ইসলামী ভারতবর্ষে ভিন্নধর্মীরা হাজার গুণ বেশি ভাল ছিল না? কিংবা আজকের সেক্যুলার বাংলাদেশের চেয়ে মুসলিম আমলের বাংলায় মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে শতগুণ বেশি শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক সময় বিরাজ করেছিল না? হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাগুলো কোন সময়ের? যে পশ্চিমাদের থেকে সেক্যুলারিজম ধার করে এনেছেন, তাদের শাসনের সময়েই ডিভাইডেশন এন্ড রুল‌ নীতির আওতায় এই দাঙ্গাবাজির রাজনীতির সূচনা নয় কি? 

সেক্যুলার আর ধর্মীয় রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য কী জানেন? সেক্যুলার রাষ্ট্র চালায় স্বয়ং মানুষরূপী খোদা আর ধর্মীয় রাষ্ট্র চালায় খোদার প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ। ফলে সেক্যুলার রাষ্ট্রে মানুষই মানুষের খোদা, কারণ সরকার যে সেই খোদার আসনে। আর ধর্মীয় রাষ্ট্রে মানুষই খোদার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন করলেও সে শুধু একজন সেবক ও দায়িত্বশীল, কোনভাবেই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী না। এখন মুসলিম নামধারী কোন শাসক কখন জালেম হয়, যখন সেও সেক্যুলার রাষ্ট্রের মত খোদার আসনে নিজেকে সমাসীন করে। 

সেক্যুলার রাষ্ট্রে সেক্যুলারিজমের ভং ধরে গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী যখন শাসক হয়, তখন সে রাষ্ট্রীয় আইনের দোহাই দিয়ে নিজ মতবাদকে সবার উপর চাপিয়ে দিতে পারে। কিন্তু একটা ধর্মীয় রাষ্ট্রে শাসক সকল মতের জনগণের অধিকার নিশ্চিত করণের ম্যানুফেস্টু বাস্তবায়ন না করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। কারণ তখন ধর্মীয় লিগ্যাসি আর ঠিক থাকে না। কিন্তু সেক্যুলার রাষ্ট্রের শাসকের কোন আদর্শিক লিগ্যাসির বালাই না থাকাতে তাদের কারো কাছে জবাবদিহিতা নেই। 

সুতরাং এসব সেক্যুলারিজম, প্লুরালিজম আলাপ বাদ দিয়ে গোড়ায় হাতে দেন। প্রাচ্যবিদদের গোয়েবলসীয় কলমে লেখা হাজার বছরের ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে পড়ে পড়ে ইসলামের প্রতি ভীত না হয়ে নিরপেক্ষ মন নিয়ে খেলাফতকে পড়ুন। জালেম শাসকদের জুলুম গুলোকে সাইডে রেখেই কী সুন্দর এক রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থা ইসলাম উপহার দিয়েছিল, সেটাকে সামনে টেনে আনুন। হীনমন্যতা ঝেড়ে নিজেদের ইতিহাসের সম্পদগুলো নিয়ে গবেষণা করুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কওমি শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে আমার সরলতম জানতে চাওয়া!

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেমন হওয়া উচিত ছিলো -মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি

 ৫ মামলায় মামুনুল হককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট