মডেল মসজিদে চাই মডেল ইমাম -বিতর্কিত লেখক ও রাজনীতিবিদ জিয়া আল-হায়দার
সাকূল্যে ১৫,০০০/- টাকা বেতনের খয়রাতি মোল্লা নয়;১৩ কোটি টাকার মডেল মসজিদে চাই সুযোগ্য মডেল ইমাম। এটিকে বলা হচ্ছে কালচারাল সেন্টার। সেন্টারের পরিচালক হয়;ইমাম নয়। ইসলামী বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করা/দাওরা/কামিল প্রাক্টিকাল যোগ্যতাধারী উচ্চ শিক্ষিত "পরিচালক কাম ইমাম-খতিব" নিয়োগ দিন। তাদেরকে উপজেলার বিসিএস কর্মকর্তাদের সমান মর্যাদা ও সুবিধা দিন। উপজেলার আইন শৃঙ্খলা কর্মকর্তারা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর প্রতিকারের কাজ করে। একজন যোগ্য ইমাম ধর্মীয় প্রেষণা দিয়ে সমাজ থেকে অপরাধের প্রবৃত্তি ও প্রবণতা প্রতিরোধ করে। কাজেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চেয়ে যোগ্য ইমামের ভূমিকা কম নয়। ইমাম ও খতিবদের করুনার পাত্র বানিয়ে রাখার নিম্ম মানসিকতা বদলান। উপজেলার সরকারি কলেজের বাংলা ইংরেজির ইতিহাসের শিক্ষকের মত একজন খতিবকে পড়াশোনা করতে হয়, গবেষণা করতে হয়। ইমাম ও খতিব তার অডিয়েন্সকে নানা বিষয়ে শিক্ষা দেয়। এভাবে সমাজ ও জনশক্তি উন্নয়নে খতিবরা ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তারা যোগ্যতা ও অবদান অনুযায়ী উপযুক্ত সম্মানী পান না। মডেল মসজিদের চেয়ে মডেল ইমাম বেশী দরকার। তাহলে সমাজে মডেল মুসলিম তৈরি হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলাম ইমামের যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে মাস্টার্স সমমান এবং হাফেজ। কিন্তু সাকূল্যে বেতন ১৫,০০০! এটা কোন গ্রেডেই পড়ে না। এখন চতুর্থ শ্রেণীর একজন সুইপারও সাকূল্যে এরচেয়ে বেশি বেতন পায়। ৪০ শতক জায়গায় ১৩ কোটি টাকার উপজেলা মডেল মসজিদ কাম কালচারাল সেন্টারে একজন প্রথমশ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা সমমর্যাদার ইমাম কাম পরিচালক নিয়োগ দিন। একজন ইউএনও,এসি ল্যান্ড,মৎস বিসিএস,কৃষি বিসিএস নিজ নিজ বিষয়ে নির্দিষ্ট কাজের বিনিময়ে সকল সুবিধা ভোগ করে। তাহলে একজন উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম খতিব কেন তার নির্দিষ্ট কাজের বিনিময়ে ১ম শ্রেণীর সুবিধা পাবে না? মাত্র ১৫,০০০ টাকায় গ্রামের খয়রাতি মোল্লার চেয়ে বেশী যোগ্যতর কেউ এখানে আসবে না।(গ্রামের ইমামদের ভূমিকাকে খাটো করা হয় নি; সমাজের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি এটাই) আর ইমাম যদি যোগ্য না হয়; এই মডেল মসজিদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
বাংলাদেশের হুজুরদের আত্মামর্যাদাবোধ নাই। এরা কে কিভাবে লবিং করে মসজিদগুলোতে দখলদারিত্ব কায়েম করবে সে চিন্তায় আছে। ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমান বেতন নিয়ে এদের কোন কথা নাই। এখনি এরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে নিয়োগ পেতে! এদের চিন্তা হচ্ছে, সাইকেল নিয়ে বাসায় বাসায় বাচ্চাদের আরবি পড়াবে। সাথে মিলাদ,খতম,ঝাড় ফুঁক,তদবীর,হাদিয়া তোহফা,ওয়াজ নসীহত,হারবাল ব্যবসা,এম এল এম ইত্যাদি তের থানার ওসি হয়ে বেতনের দ্বিগুণ টাকা ইনকাম করবে। এতটুকুই এদের চিন্তার দৌড়!
হুজুরদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন জরুরী। এজন্য রাষ্ট্রের সাথে তাদের বোঝাপড়ায় যেতে হবে। তাদের উচিত এই কালচারাল সেন্টারের "পরিচালক কাম ইমাম" পদ তৈরি ও সেখানে কর্মকর্তা মর্যাদায় নিজেদের কর্মসংস্থানে জোর দেয়া। ইমামদের ফিক্সড বেতনের পরিবর্তে ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থায়ী বেতন কাঠামো, ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি এগুলো তৈরি করতে হবে।
এই মডেল মসজিদ তৈরিই শেষ কথা না। মুসল্লিদের সমাগম ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এখানে মিনি শপিং মল, বাস স্টপেস, মসজিদ ঘিরে শিশুপার্ক, দৃষ্টিনন্দন ওয়াক ওয়ে,গার্ডেন,ছোট লেক ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
নৈশকালীন বয়স্ক শিক্ষা,নারী শিক্ষাসহ মসজিদ কমপ্লেক্সে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ধর্মীয় সেমিনার ইত্যাদি কার্যক্রম থাকা দরকার।
দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করে মডেল মসজিদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সুচারুরূপে এর ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করছে এর সাফল্য।
অনেকের প্রশ্ন মসজিদের মডেল হয় কিনা? হয়। যেমন ট্রেডিশনাল মসজিদে নারীর প্রবেশাধিকার নাই; মডেল মসজিদে নারীরা যেতে পারবে। সেখানে অতিথি কক্ষ আছে।অটিস্টিক শিশুদের জন্য আশ্রয় থাকছে। এই যে মসজিদ কে বহুমাত্রিক করে তোলা এটাই মডেল মসজিদ। এখন প্রয়োজন কর্মকর্তা মর্যাদায় যোগ্য ইমাম কাম পরিচালকের হাতে এর দায়িত্ব তুলে দেয়া। এজন্য আইম্মা ও ওলমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। ইমাম কেন কর্তৃপক্ষের করুনায় বেঁচে থাকবে? বেতন যেহেতু সে নিবেই মর্যাদাপূর্ণভাবেই নেয়া উচিত নয় কি?
সুন্নী,কওমী,আলিয়া,দেউবন্দি,জামায়াতি,সালাফী লবিং এসব দখলদারিত্ব মানসিকতা বাদ দিয়ে আল্লাহর ঘরকে আধিপত্যবাদ ও মতাদর্শ মুক্ত রাখেন। ১৫ হাজার টাকার লোভে লাইন না ধরে আগে নিজেদের সম্মানজনক পদ পদবী,বেতন, পদোন্নতি, ডেজিগনেশন এসব ঠিক করেন। নিজের মাঝে আত্মমর্যাদা সৃষ্টি করেন। আর ইমামরা নিয়ত করেন,কোন লবিং,ঘুষ, সুপারিশ দিয়ে অন্ততঃ ইমামতি করবেন না। স্বাভাবিক নিয়মে কপালে থাকলে হবে না হয় নাই এমন তাকদীরে ভরসা রাখেন। নিজেদের আর নিচে নামায়েন না। চতুর্থ শ্রেণীর সুইপারের বেতনে অমর্যাদার চাকরি কে না বলুন। দরকষাকষি করুন। ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা মর্যাদা দাবী করুন। আমি আমার জনগণকে রাষ্ট্রের করুনা ভিক্ষা বাদ দিয়ে প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার আদায়ে যৌক্তিক নেগোসিয়েশনে যেতে বলছি। আমি ইমামদের সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ইমামদেরকেই এগিয়ে আসতে বলছি। আপনি সমাজের ইমাম। মাথানিচু করে আর কতদিন চলবেন? রাষ্ট্র আপনার টাকাই আপনাকে দেয়। কেউ বাপের টাকা দেয় না। সুতরাং রাষ্ট্রের কাছ থেকে টাকা নিতে 'না জায়েজে'র ফোবিয়ায় ভুগবেন না। মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেন। এই সমাজ আপনার। এখানে আপনার অবদান আছে। অধিকার আছে। ইউএনও ফ্লোরে বসে যার ভাষণ শুনে সে যোগ্যতায় তার চেয়ে কম কিসে? তফাৎ হল সে দুনিয়ার জ্ঞানী; আপনি ধর্মের জ্ঞানী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন