ডিফেল্ডিং জিয়া! -জিয়া হাসান

Published from Blogger Prime Android App

আমি প্রথম আলো ঘরানার বমাপন্থি সেকুলার লিবারেল ন্যারেটিভে বড় হয়েছি। ২০১৪ সালে প্রকাশিত আমার শাহবাগ থেকে হেফাজত বইয়ের, সব চেয়ে লজ্জা জনক লাইনটা হচ্ছে, শাহবাগের পূর্বে  ২০১২ এর ডিসেম্বারে লেখা তোমরা যারা জাফর ইকবাল করো, প্রবন্ধে আমি লিখেছি, আমি মৌলবাদীদের ভয় পাই না, কারণ  প্রথম আলোর নেতৃত্বে   মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইএ আমি বিজয়ী হয়েছি। 

এই বইয়ের প্রতিটা লাইন আমি এখনো স্ট্যান্ড করি। কিন্তু এই লাইনটা মনে পড়লে, নুন গায়ে পড়া জোঁকের মত কুচকে গিয়ে,  আমি লিটারেলি ক্রিঞ্জ করি।  

ফলে ন্যাচারালি, বাংলাদেশের গনতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা, ভুল সঠিকের ইতিহাস ইত্যাদি প্রথম আলোর ন্যারেটিভে বিশ্বাস করেই,  বড় হয়েছি। তারেক জিয়াকে যখন মাইর দিছে আমি খুশি হইছি। এক এগারো যখন হইছে তখন আমি লন্ডনে, সেই খান থেকে ইন্টেরনেট থেকে ইমেইল এড্রেস খুজে বের করে  ডক্টর ইউনুসকে মেইল লিখছি, আমি দেশে এসে  উনার সাথে কাজ করতে চাই। (কোন উত্তর পাই নাই)। 

এই ভাবধারায় আমি জানছি, জিয়াউর রহমান একটা জঘন্য স্বৈরশাসক যে সংবিধানে বিস্মিল্লাহ যোগ করেছে, মুজিব হত্যায় যার হাত আছে, সে রাজনীতিকে অর্থ দিয়ে কলুষিত করেছে,  বাংলাদেশের সব ইভিলের রুট কজ, এই লোকটা- বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা দ্বিদলিয় পরিবারতন্ত্র। 

ইমেটির‍িইয়াল আমি ৫ বছর রেশনের ভাত খাইছি,  কিন্তু আমার মাইন্ড মডেল প্রথম আলো কেন্দ্রিক সেকুলার লিবারেল ভ্যালু   গুলো দিয়েই প্রভাবিত। আপনি ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সাম হওয়ার ইন ব্লগে আমার লেখা গুলোতে পাবেন। কি ভাবে দ্বিদলিয়ও পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে হবে তা নিয়ে মিনিমাম ৫০০০ ওয়ার্ডের লেখা পাবেন। লিঙ্ক কমেন্টে সংযুক্ত। 

কিন্তু, ২০১৪ এর পরে, যখন মনে হলো এই রাষ্ট্র একটি অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। আমরা এতো বছরে যা কিছু তৈরি করেছি, যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক কোহেশান, মিনিমাম বেছে নেওয়ার অধিকার, একটা ধীর হলেও প্রগতিশীল পরিবর্তন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ধারা – তার সব কিছু  ভেঙ্গে পরছে  এবং সব কিছু রিপ্লেস হচ্ছে অত্যন্ত রিগ্রেসিভ সর্বগ্রাসি, মাফিয়া শক্তির দ্বারা যারা জলপাই ব্যবসার আড়ালে দেশের সর্বস্ব দখল করে নিচ্ছে। দেশের প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মেধাভিত্তিক সক্ষমতা যা ছিল, তার সব ধ্বংস করছে । 
এবং সব কিছু ধ্বংস করার পরেও এই রাষ্ট্র কেন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পরছে না, সেইটা ইনভেস্তিগেট করতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে দেখলাম, বারে বারে আমি একটা লোকের নাম পাচ্ছি। যে পোশাক শিল্পকে গড়ে দিয়েছেন, কৃষিকে গড়ে দিয়েছেন, বিদেশে শ্রমিক পাঠানো গড়ে দিয়েছেন। এমন কি এক সময়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদেরকেও বিদেশে পাঠানোর ইনফ্রাস্টড়াকচার গড়ে দিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক,  আইসিসিডিআরবি,  ইসলামি ব্যাংক, স্টক মার্কেট,  ক্রীড়া , সিনেমা , বাংলা একাডেমীর বই মেলা -এনি থিং আমি টাচ করেছি, আমি দেখেছি- এই গুলোর ইন্সটিটিউশনাল ভিত্তি উনি গড়ে দিয়েছেন। 

তখন আমি প্রশ্ন করেছি, তাহলে আমি এতো দিন কি জেনেছি ? এই গুলো আমাকে কেউ বলে নাই কেন ? আমাকে কেন এই গুলো খুঁজে বের করতে হলো। 

আমি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গুলোর ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে দেখলাম জিয়ার মৃত্যুর পরে, এরশাদের মত একটা লুচ্চা সব কিছু ভেঙ্গে খেয়েছে ,কিন্তু তিনি যে ভিত টা গড়ে দিয়েছেন তা নিয়ে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা রাষ্ট্রটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। 

পোশাক শিল্প বলেন রেমিটেন্স বলেন গ্রামীণ ব্যাংক বা আশার  ক্ষুদ্র ঋণ, ইসলামি ব্যাংক, আইসিসিডিারবি , বহুদলীয় গনতন্ত্র, মেধাভিত্তিক প্রশাসন, জুডিসিয়ারির ইন্ডিপেন্ডেন্স, ফ্রিডম অফ প্রেস,খাদ্য নিরাপতর জন্যে   শস্য গুদাম, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, পাট শিল্প, ফার্টিলাইজার  কৃষি  সব কিছুতেই তিনি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন  যেই সব সেক্টরে    তার মৃত্যুর পরে আর মৌলিক কিছু কেউ গড়ে নাই। 
সেইটা খালেদা জিয়ার আমলে হোক আর শেখ হাসিনার আমলে হোক। লুচ্চা এরশাদের কথা বাদই দিলাম। 
কিন্তু, এই পাঁচ বছরে এই লোক টা যা গড়ে দিয়েছে,  তার বেনেফিট আমরা ৩০ বছর পর্যন্ত পেয়েছি। 

তার তৈরি করা বুনিয়াদ গুলো এত শক্তিশালী ছিল, যে ৩০ বছর পরেও শেখ হাসিনার মাফিয়া তন্ত্র সব কিছু বনফায়ার করে বনভজন করার পরেও এখনো সব ভেঙ্গে ফেলতে পারে নাই । 

আজকে বাংলাদেশের ৫০ বছর উপলক্ষে, এই প্রতিষ্ঠান গুলোর করি কব্জা লাকরির মত পুরিয়ে   উন্নয়নের বনফায়ার, সেইটা আর কয় বছর টিকবে জানিনা। 

এই গুলো এমন এক সময়ে তিনি গড়েছিলেন যেই সময়ে ভারত চারটা ফ্রন্টে বাংলাদেশ আক্রমণ করার প্রস্তুতি রেখেছিল। জিয়া অবসেসড ছিলেন, ভারতের এই আক্রমণ নিয়ে। সিআইএর ডকুমেন্টে এই নিয়ে ডিটেল আলোচনা আছে। কর্নেল ফারুকেরা একটার পর একটা ক্যু ঘটাচ্ছে।
অনেকে জানেন কিনা জানিনা, জিয়াউর রহমান একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন, সিনেমাটার নাম কলমিলতা। আইএমডিবিতে উনাকে পারশিয়াল ক্রেডিট দেওয়া আছে। ৩০ বছরেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র, এফডিসিতে জিয়ার কিনে দেওয়া ক্যামেরা গুলো পাল্টাতে পারে নাই। 
আরো শত শত রেফারেন্স আমরা চোখে পড়েছে। 
বাংলাদেশ কেন ফেইলর হতে পারে নাই, বাংলাদেশে প্যারাডক্স নামক একটা দ্বিধা তৈরি করা হয়েছে এর সব কিছুর মুলে রয়েছে তার তৈরি করা  প্রতিষ্ঠান গুলো। তিনি শুধু বিল্ডিং তৈরি করেন নাই, অনেক গুলোকে কিছুটা শিরদাড়াও তৈরি করে দিয়েছিলেন। 

কিন্তু এইটা ক্লিয়ার, আজকে  জিয়াউর রহমান ফেইলর।  কারণ তিনি যেই ভাবে এই রাষ্ট্র তৈরি করে গিয়েছেন, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রক্রিয়াকে পারমানেন্টলি ধ্বংস করে, আনুগত্য এবং চাটুকারিতার ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র সেইটা  শেখ হাসিনা রিপ্লেস  করে দিয়েছেন। 
 প্রথম আলো থেকে, শুরু করে প্রতিটা সংবাদপত্রে,  বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরের উন্নয়নের গল্পে , যে জিয়াউর রহমানের নাম নেওয়া হয় নাই। সেইটা আমি প্রচণ্ড খুশি হয়েছি। 
কজ দিস ইজ একজেক্টলি দা রাষ্ট্র যেইটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। জিয়াউর রহমানের স্বপন পরাজিত। 
জিয়াউর রহমানের তৈরি প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে এই রাষ্ট্র ৩০ বছর চলছে, তাতে কিছু আর যায় আসেনা। কারণ বিগত ১০ বছরে বঙ্গবন্ধুর স্বপন হাসিনা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই উৎসবে জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারিত হলে, কবরে উনার লাশ মোচড়ায় উঠতো। 

আমার জিয়াকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা। কারণ বিএনপি এমন একটা অথর্বের দল। তাদের দল প্রধান থেকে, সর্বনিম্ন পর্যন্ত, এমন লেভেলে অযোগ্যতা এবং চাটুকারিতা- এইটাকে  আর জিয়ার তৈরি  দল হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
 
এইটা জিয়ার বউ, তার নিম্ন মেধার সন্তানের দল। জিয়া বেচে থাকলে, জিয়া আইন করে এদেরকে দল থেকে দুরে রাখতো। 

আমি তাই জিয়াকে নিয়ে কিছু লিখতে চাই নাই। কারণ, তাতে মনে হয় 
আমি বিএনপির পক্ষে এপলজি দিচ্ছি। এদের ডিফেন্ড করা অসম্ভব। এবং এদের ডিফেন্ড করলে, গায়ে গু এর  গন্ধ আসে। যেইটা আমার  নেয়ার দরকার নাই। 

কিন্তু, তবুও স্বাধীনতার ৫০- বছরে পূর্তি উপলক্ষে যে রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি যৌথ  মিথ্যাচার হয়েছে সকল মিডিয়াতে  তার একটা জবাব থাকা দরকার। 

কারণ,   সম্পূর্ণ এপলোটিকাল, বুরজোয়া ফ্যামিলির ছেলে হয়ে, একজন সং রাইটার হয়ে যখন আমাকে পলিটিক্সকে ডিল করতে হয়েছে তখন আমি ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে  দেখেছি- আমি যা কিছু এঞ্জয় করেছি, এই রাষ্ট্র এত বছর  এঞ্জয় করেছে ,  যা কিছু শুভ হিসেবে দেখেছি, এমন কি সাবজেক্টিভ্লি খারাপ অনেক কিছুই -তা এই লোকটার গড়ে দেওয়া। 

তাই উনার ৪০ বছর মৃত্যু দিবস  উপলক্ষে  আমি একটু লিখে যাবো, যেইটা  প্রথম আলো  আপনাকে কখনও  বলবেনা। 

সাথে থাকবেন।
Published from Blogger Prime Android App

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

 ৫ মামলায় মামুনুল হককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট

Body Smell: ৩ খাবার: নিয়মিত খেলে দূর হবে ঘামের দুর্গন্ধ

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেমন হওয়া উচিত ছিলো -মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি